December 31, 2025, 7:39 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন
আজ ১৪ ডিসেম্বর—শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ ও কলঙ্কিত অধ্যায়। ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে, যখন স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই সংঘটিত হয় ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। পরাজয় অনিবার্য জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসর আল-বদর, আল শামস বাহিনী জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন ষড়যন্ত্রে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে এই দিনে শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ সমাজের আলোকবর্তিকারা নির্মমভাবে প্রাণ হারান। স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত দুর্বল করাই ছিল এ বর্বরতার মূল উদ্দেশ্য।
স্বাধীনতার পর রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিসহ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চোখ-হাত বাঁধা, নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও তথ্যমতে, ১৪ ডিসেম্বরের রাতেই ঢাকায় অন্তত দুই শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নিজ নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ বিভিন্ন টর্চার সেলে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে রায়েরবাজারের ইটখোলা ও মিরপুর বধ্যভূমিতে তাদের হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। গবেষণা ও নথি অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসজুড়েই এক থেকে দেড় হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, আত্মসমর্পণের ঠিক আগে হানাদার বাহিনী জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর ক্ষত আজও বাংলাদেশ বহন করে চলেছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বেদনার দিন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শোকাবহ এ দিনে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল দেশকে মেধাশূন্য করার গভীর ষড়যন্ত্র। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ আজও একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রেরণা জোগায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা ও জ্ঞানচর্চার পথে তাদের ত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যার পেছনে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ছিল, যার ক্ষত আজও সমাজে অনুভূত।
আজ সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।